
চৌপদি প্রথা নেপালের অনেক গ্রামাঞ্চলে এখনও চালু রয়েছে। ফাইল ছবি। এএফপি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: ‘ঋতুস্রাবের কুড়েঘরে’ নির্বাসিত হওয়ার পর সেখানে মৃত্যু হয়েছে এক নেপালি মা ও তার দুই পুত্র সন্তানের।
কুড়েঘরে তীব্র শীত থেকে বাঁচতে সেই মা আগুন জ্বালিয়েছিলেন আর সেই ধোঁয়া থেকেই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে ধারণা করা হচ্ছে, এ কথা বিবিসিকে জানান এক কর্মকর্তা।
ঋতুস্রাবের সময়ে নারীদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার প্রথা নেপালে নিষিদ্ধ করা হলেও তা এখনও সেখানের গ্রামাঞ্চলে ভালভাবেই চলছে।
ঘটনাটি ঘটেছে নেপালের পশ্চিমাঞ্চলের বাজুরা জেলায়।
জেলার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা চেতারাজ বরাল জানান, নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে তবে কর্তৃপক্ষ এখনো মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করেনি।
এএফপিকে পুলিশ জানান, কুড়েঘরের ভেতরে কম্বল পুড়ে গিয়েছে এবং নিহত মায়ের পা অগ্নিদগ্ধ হয়েছে।
নিহত দুই শিশুর বয়স যথাক্রমে ১২ ও ৯ বছর।
বরাল জানান, শেষকৃত্যের জন্য নিহতের পরিবারের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ ধরণের ঘটনা নেপালে এটিই প্রথম নয়। ঋতুস্রাবের সময়ে নারীদের আলাদা কুড়েঘরে ঘুমানোর এই প্রথার নাম ‘চৌপদি’ যা ২০১৭ সালে নিষিদ্ধ করে দেশটির সরকার। কুড়েঘরে নির্বাসিত অবস্থায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যুর একাধিক ঘটনা এর আগেও ঘটেছে এবং সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে এক তরুণীর।
হিন্দু ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই প্রথায় ঋতুস্রাব চলছে অথবা সদ্য সন্তান হয়েছে এমন নারীদের অপবিত্র হিসেবে দেখা হয় অথবা দুর্ভাগ্য বয়ে আনবে এমন ভাবা হয়, আর তাই ঘুমানোর জন্য বাড়িতে না রেখে তাদের থাকতে দেওয়া হয় আলাদা কুড়েঘর অথবা গোয়াল ঘরে।
এছাড়া তখন পশু ও পুরুষদের স্পর্শ করার ব্যাপারে তাদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, কিছু খাবার গ্রহণ থেকে বিরত রাখা হয় এবং ঘরের টয়লেট ও পানি ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় যার ফলে গ্রাম থেকে অনেক দূরে হেঁটে যেতে হয় তাদের।
চৌপদি পালনে কোনো নারীকে বাধ্য করা হলে ৩ মাসের কারাদণ্ডসহ ২৭ ডলার জরিমানার আইন রয়েছে নেপালে। তবে মানবাধিকার কর্মীরা এই আইনকে আরও কঠোর করার দাবি জানিয়ে আসছে।